কক্সবাজার প্রতিনিধি :: কক্সবাজার শহরের কস্তুরাঘাট এলাকায় গত দুই মাসে বাঁকখালী নদীতীরের ৪০ হাজার ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের বাগান নিধন করে প্রায় ৬শ হেক্টর জমি দখল করেছে প্রভাবশালীরা। এখন নদী থেকে মাটি তুলে ও পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা ফেলে সেই জমি ভরাট করে বিক্রি করা হচ্ছে প্লট হিসাবে।
কক্সবাজার শহরের সদর মডেল থানা থেকে প্রায় ৫শ মিটার উত্তরে বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট এলাকা। নদীর অপর পাশে খুরুশকুল। মাঝখানে বাঁকখালী নদীর উপর তৈরি হচ্ছে ৫৯৫ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু। সেতু নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই শুরু হয়েছে নদী ও তীরের প্যারাবন দখল। প্যারাবনের গাছপালা নিধন করে নদী ভরাট করে প্লট বানিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। এভাবে সংযোগ সড়কের পাশে প্রায় ৬শ হেক্টর এলাকার প্যারাবন উজাড় করে নির্মাণ করা হচ্ছে শতাধিক ঘরবাড়িসহ নানা স্থাপনা। গত ১৫ এপ্রিল সকালে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আমিন আল পারভেজের নেতৃত্বে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের একটি দল সরেজমিনে পরিদর্শন করে নদী দখলের সাথে জড়িতদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানায়।
পরিবেশবাদী সংগঠন ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির (ইয়েস) প্রধান নির্বাহী ইব্রাহিম খলিল উল্লাহ মামুন জানান, বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট এলাকায় গত দুই মাসে প্রায় ৬শ হেক্টর এলাকায় নদী দখল ও ভরাট করে ৪০ হাজার কেওড়া ও বাইনগাছ কেটে শতাধিক টিনের ঘর ও পাকা ভবন তৈরি হয়েছে এবং হচ্ছে। গাছপালা উজাড় হওয়ায় ২০৫ প্রজাতির পাখির আবাসস্থল ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়েছে। এছাড়া নদীর অন্যান্য এলাকায়ও দখল ও ভরাটের কারণে নদীর গতিপথ সংকুচিত হয়ে পড়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এ ঘটনা সরেজমিনে পরিদর্শন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আমিন আল পারভেজ বলেন, নদী দখল ও প্যারাবন নিধনের অভিযোগ পেয়ে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। নদী দখল ও প্যারাবনের গাছ নিধনের সত্যতা পাওয়া গেছে। এছাড়া নদী দখলদারদের উচ্ছেদ করতে হাই কোর্টের নির্দেশনাও রয়েছে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে নদী দখলকারী ও প্যারাবনের গাছ নিধন করে স্থাপনা নির্মাণকারী এবং প্লট বাণিজ্যে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। উচ্ছেদ করা হবে নির্মিত ও নির্মাণাধীন সকল স্থাপনা।
বাঁকখালী কক্সবাজার জেলার গুরুত্বপূর্ণ বারোমাসী জলধারার নদী। কক্সবাজারের দুই উপজেলা ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার প্রায় ৭ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকার অন্যতম প্রধান মাধ্যম বাঁকখালীতে ৩৫ প্রকারের মাছ ও ১০ প্রজাতির চিংড়ির আবাসস্থল চিহ্নিত করেছেন বিজ্ঞানীরা। এছাড়া বঙ্গোপসাগরের ৪ শতাধিক সামুদ্রিক প্রাণীর অধিকাংশই এই নদী মোহনায় এসে ডিম ছাড়ে বলে জানান কক্সবাজার সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্র প্রধান ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, বাঁকখালী নদীর এস্টোয়ারি কক্সবাজারের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছে। এছাড়া কক্সবাজারে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় অবদান রাখছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) এক রিট মামলার প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর হাই কোর্ট বাঁকখালী নদী দখলদারদের তালিকা তৈরি করে তাদের উচ্ছেদ ও দূষণের উৎস চিহ্নিত করে তা বন্ধের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি যেকোনো উদ্দেশ্যে নদী ইজারা থেকে বিরত থাকতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকসহ ১০ সরকারি কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। আদালত বাঁকখালী নদীকে কেন প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করতে নির্দেশ প্রদান করা হবে না বা কেন প্রাথমিক প্রবাহ ও সিএস জরিফ অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণপূর্বক তা রক্ষা করার নির্দেশ প্রদান করা হবে না, কেন নদীর উভয় তীরের উপকূলীয় বন ফিরিয়ে আনার নির্দেশ প্রদান করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা বলেন, বাঁকখালী নদীর প্যারাবন দখল ও ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে দুটি মামলা হয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে। তবুও প্যারাবন দখল ও দূষণ বন্ধ করা যাচ্ছে না। নিয়মিত অভিযান চালানোর মতো পর্যাপ্ত লোকবল নেই আমাদের।
পাঠকের মতামত: